ফেসবুক আমার
সম্পর্কে কী কী জানে?
উত্তরঃ আমার নাম, আমার জন্ম তারিখ, আমার লিঙ্গ, আমার পছন্দ, আমার ভাষা, আমার ধর্ম, আমার রাজনৈতিক অবস্থান, আমার মোবাইল নাম্বার, আমার ইমেইল, আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, আমার কর্মক্ষেত্রের বিবরণ, আমার বৈবাহিক অবস্থা, আমার স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা, আমার ওয়েবসাইটের ঠিকানা, আমার সামাজিক যোগাযোগের ঠিকানা, আমি কখন কী করছি, কোথায় যাচ্ছি, কার সঙ্গে যাচ্ছি, কী দেখছি, কী খেতে পছন্দ করি, অবসরে কী করতে পছন্দ করি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই প্রশ্নের চেয়ে
কঠিন প্রশ্ন ফেসবুক আমার সম্পর্কে কী জানেনা?
ফেসবুক খুব কৌশলে
আমাদের কাছ থেকে সব তথ্য তাদের ডাটাবেজে নিয়ে নিয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নিচ্ছে। আপনি
হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন ফেসবুক চালানোর সময় শুরুতেই উপরে কিছু সাজেশন আকারে প্রশ্ন
দেওয়া থাকে। যেমন "অবসরে আপনি কোন শিল্পীর গান শুনতে পছন্দ করেন সবাইকে
জানিয়ে দিন"। আমি অবসরে কী করতে পছন্দ করি কিংবা করি না তা দিয়ে ফেসবুকের কী!
আছে। অনেক কিছুই
আছে। সাধারণ ভাষায় আমাদের এই তথ্যগুলোকে ডাটা বলে। যারা ডাটা সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা
করেন তারা ভালো করেই জানেন একজন ব্যবসায়ীর কাছে এই ডাটার কত মূল্য। ফেসবুক একটা
ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠান। তাদের কাছে বিনামুল্যে পাওয়া কোটি কোটি ডাটার মূল্য অপরিসীম।
আমাদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে ফেসবুক নিউজ ফিডের ডান পাশে ফেসবুক বিভিন্ন
এডভার্টাইজ দিয়ে থাকে। আমাদের পছন্দের উপর ভিত্তি করে ফেসবুক বিভিন্ন পেজ, গ্রুপ সাজেস্ট করতে থাকে। যা দিয়ে ফেসবুকের আয় হয় , আর মার্ক জাকার্বার্গ বনে যান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনীতে।
এছাড়া আমাদের এই
মুল্যবান তথ্য যে তারা সবসময় রক্ষা করতে পারছে তা নয়। প্রায় কয়েক বছর আগে
ক্যামব্রিজ এনালিটিকা নামে একটা অ্যাপ প্রায় কয়েক মিলিয়ন গ্রাহকের ফেসবুক তথ্য
ফেসবুক ডাটাবেজ থেকে নিয়ে নেয়। এবং বলা হয়ে থাকে সেই ডাটা ব্যবহার করে তারা
রাজনৈতিক ভাবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। এবং এর ফলেই ট্রাম্প
কিংবা ব্রেক্সিটের মত ফলাফল আমরা দেখতে পারছি।
এটা সহজ বিষয় , আমার কাছে যদি একটি দেশের বেশির ভাগ মানুষের সব তথ্য থাকে আমি
সেগুলো পর্যালোচনা করে সহজেই তাদের চাহিদা বুঝতে পারবো। ফলে সে অনুযায়ী বিভিন্ন
রাজনৈতিক দল যদি তাদের প্রচারণা চালায় তবে বলাই যায় ভবিষ্যৎ আমাদের হাতে নেই, ভবিষ্যৎ আছে ঐ সব ডাটা ওয়ালা ব্যক্তির কাছে।
আর আমরা এমনভাবে
ঐ ডাটার ফাঁদে আসক্ত যে আমাদের মনেই হবে না , আমাদের একজনের মূল্যবান ডাটা তাদের কাছে মিলিয়ন ডলার মূল্য।
তাহলে কী করা যায়? ফেসবুক ডিলিট করলেই কী এর সমাধান?
আমার তেমন মনে
হয়না। কারণ আমার এই পোস্টটাও যদি কেউ পড়ে তা পড়বে ফেসবুকের মাধ্যমে। তবে আমাদের
অন্ধভাবে সবকিছু যে কোন ওয়েবসাইটে দিয়ে দেওয়া উচিত নয়। কোন সাইটে সাইন আপ করতে যা
দেওয়া একান্তই জরুরি তা ছাড়া বাকি তথ্য দেওয়া উচিত নয়। আর যদি মনে হয় যে কোন
ওয়েবসাইট আপনার তথ্য রক্ষা করতে সক্ষম নয় , তবে যত দ্রুত সম্ভব ভালো হয় সে ওয়েবসাইট হতে একাউন্ট ডিলিট করে দেওয়া।
পাদটিকাঃ
[1] https://www.theguardian.com/technology/2018/mar/20/facebook-is-it-time-we-all-deleted-our-accounts
No comments:
Post a Comment